|
---|
মাঝে মাঝেই চা বাগানের সবুজে আর স্নিগ্ধ বাতাসে চোখ এবং শরীর জুড়ানোর ইচ্ছে জাগে। কয়েক বছর পর একদিন যখন বেরোলাম তখন হঠাৎ সামনে দাড়িয়ে দেখতে পেলাম সারজুনাকে। প্রথম দেখায় ওকে চিনতে পারিনি কিছুটা কাছে এসে দেখলাম পুরো শরীরে কেমন একটা ক্লান্তির ছাপ। সময় বের করে দেখলে হইতো ওর সমস্ত হাড়গুলো গুনে নেওয়া যেত।
অদ্ভুত এবং অবাক দৃষ্টিতে ওকে তাকিয়ে দেখার পর বুকের ভিতরটা কেমন যেন কেঁপে উঠলো। বাপমরা এই মেয়েটাকে কয়েকবছর আগে দেখেছিলাম সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা রূপে। ফজরের আজানের পর রাস্তাই বেরোলেই দেখা যেত অনেক মহিলা এবং কুমারী মেয়েরা দল বেঁধে ছুটতো। ভোর চারটা থেকে সকাল ৭/৮ টা অবধি চলতো তাদের চা পাতা তোলার প্রতিযোগিতা।
আমাদের সকাল শুরুর আগেই তাদের সারাদিনের রোজগার হয়ে যেত। তারপর নিয়ম মাফিক যে যার মতো করে স্কুল, কলেজ,আড্ডা ইত্যাদি করে বেড়াতো। সারজুনাও তার ব্যতিক্রম ছিলনা। বিধবা মা খুব শখ করে সমস্ত রকম সাধ্য অনুযায়ী বিয়ে দিয়েছিল মেয়েটাকে। কিন্তু শশুরবাড়ি প্রায় নানারকম অশান্তি আর অত্যাচার লেগেই থাকত। এর মাঝেই সে দুই সন্তানের মা হয়ে গেছে। কিন্তু অশান্তি আর অত্যাচার কোনদিক থেকেই কম হইনি।
একদিন অতিমাত্রার শারীরিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অভিমানে এসে ঠাই নিয়েছিল মায়ের ঘরে। কিন্তু পাগলীটা বুঝে উঠতে পারেনি তাদের কোনো অভিমান করতে নেই। শুধু গা গতর খাটিয়ে পরের ঘরে টিকে থাকতে হয়।
কিছুটা মনের ত্যাগ আর অভিমান নিয়ে সে যখন প্রিয়জনের আসার প্রহর গুনছিল, এর মাঝেই তার জায়গা দখল করে নিয়েছে অন্য কেউ। সে যখন জানতে পারে তার স্বামী আবার দ্বিতীয় স্ত্রীকে ঘরে তুলেছে সেই মুহূর্তেই তার সমস্ত রকম আশা, আকাঙ্খা, অপেক্ষা নষ্ট হয়ে যায়। তাই মানসিক যন্ত্রণা আর দুশ্চিন্তাই কারণে তার শরীরে মাংসের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে।
অবশেষে সমস্ত অভিমান ভুলে গিয়ে সন্তানদের সুখের কথা ভেবে এবং বিধবা মায়ের বোঝাটা হালকা করার জন্যে এখন নিজের জীবনকে ছোটগল্প বানিয়ে সতীনের সঙ্গেই জীবনযাপন করছে সারজুনা।
আপনার মতামত