স্মৃতিচারণায় মধুর দিনগুলি!

গোধুলীর সূর্য প্রায় বিদায় নিতে যায়, এমন সময় আসরের তাসবীহ শেষ করে সীমা। শৈশব, কৈশোর, যৌবনের দিনগুলো মমতাময়ী স্নেহময়ী মায়ের পরশ মন ছুঁয়ে আনন্দাশ্রু বিগলিত হয়। মা আজ তুমি নেই, ওপারের ডাকে সাড়া দিয়ে আরাম করছ। তোমার জন্য অঞ্জলী ভরে তোহফা দিয়ে যাই-” রব্বির হাম হুমা কামা রব্বাইয়ানি সগীরা।”(হে আমার প্রতিপালক শৈশবে তাঁরা যেমন করে প্রতিপালন করেছেন তাদের উপর দয়া করুন)
আল-কুরআন,১৭:২৪)
তুমি কতো ভালো মা। সেই দিনের স্মৃতি আজও শরণাতীত। মেয়েবেলা দেখতাম ধান ভাপরা দিয়ে ঘর্মাক্ত শ্বেতবিন্দু তোমার কপোল বয়ে ঝরনা ঝরছে, তারপরও তুমি পবিত্র অজু দিয়ে তোমার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পবিত্র করে চাশতোদ্দুহা সলাত আদায় করেছ।
আমার হৃদয় জুড়ে তখন সোনালী ছটা বিচ্ছুরিত হতো। তোমার সলাতরত অবস্থা আমি নিরীক্ষণ করতাম। আজ যেমন তোমার জামাই এর সলাত দেখে আমার হৃদয় জুড়ে বেহিসাবি জ্যোতির বিচ্ছুরণ ঘটে। তুমি ৭০বছর বয়সে প্রতিদিন ১পারাহ কুরআন তিলাওয়াত করে গেছ, তাহাজ্জুদ, ইশরাক, আওয়াবীন,সকাল বিকাল চার তাসবীহ, অসংখ্য দু’আ দুরুদ পড়েছ। মিষ্টি, মিষ্টি কথা তে মানুষের মনে আজও জায়গা দখল করে আছো।
তুমি পড়তে খুবই ভালো বাসতে, ভালোবাসতে অন্যের কাছে ভালো ভালো কথা পৌঁছে দিতে। তুমি দান সদকাহও অনেক অনেক করতে পসন্দ করতে।
মা তুমি কতো ভালো মা!
তোমার হাতের চুড়ি কানের ইয়ারিং ও সদকাহ করেছিলে তোমার মরহুম পিতা-মাতার উদ্দেশ্যে।
মা তুমি কতো ভালো মা!
তোমার হজ্ব মুবারক আদায়ের পর তোমার মক্কা-মদীনার সফরের আনন্দ যেন পার্থিব জান্নাতী স্বাদ ছিল।
তোমার নিজহাতে বানানো কুরআনের গেলাপসগুলির প্রশংসা করে আব্বার দুনয়নে মুক্তাশ্রু ঝরে পড়ছিল। আজও তুমি তোমার
নেককার স্বামীর দু’আ পেয়ে যাচ্ছ।
তুমি চলে যাওয়ার পর তোমার কবর থেকে সুগন্ধি ছড়াচ্ছিল, ঘরবাড়ি যিকিরের তানে মত্ত ছিল ইনশাআল্লাহ, তোমার মাগফিরাত কামনায়”ইসলামী বুনিয়াদি জ্ঞান” ৫০০কপি আমলের দরজায় বুলন্দ হল। আলহামদুলিল্লাহ।
অজস্র অজস্র কথারা ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে স্নিগ্ধ শিশিরভেজা হৃদয় ডানায়।
মা!…মা…মা!….
তুমি অনেক দূরে নেই আমার কাছেই আছো। আমার অন্তরের মণিকোঠায়।
খুবই ভালো লাগে তোমার এই কথাটি-
“পুরুষরা পরিশ্রম করে তাদের নিজের জন্য নয়, তাদের বিবি বাচ্চাদের জন্য:অতএব তাদের স্ত্রীরা যেন তাদের খিদমতে খামতি না করে।”
আরো বলতে-
“চাকরি করতে বাইরে যেয়োনা, স্বামীর সন্তুষ্টি করো, উনিই বড়ো বুজুর্গ।”
কথাগুলো আমার হৃদয় জুড়ে প্রতিক্ষণে নাড়া দিয়ে যায়, অনুকম্পা সৃষ্টি করে।
বিশাল জীবন সমুদ্রে রাতের অন্ধকার ছাড়িয়ে পুরনো নক্ষত্রের লাল নীল চাহনি নির্জন পথে আবার নতুন পৃথিবীর জন্ম দেয়। আমি তোমার নির্জন নিহারিকায় একফালি মেঘ হয়ে ভেসে যায়।
মা তুমি ভালো থেকো। আল্লাহর রহমত ঝরে পড়ুক ইল্লিয়ুনের বিশাল দরজায়।

ইতি – তোমার জীবনের মাণিক আমি।