মমতার বৃষ্টি

আকাশ তোমার উদারতার অনুভূতি আমাকে মুগ্ধ করে। তোমার
দেখতে ঠিক যেন আমার মায়ের মতো। রুক্ষ ধরণীর বুকে এক পশলা রহমতের বৃষ্টি নামিয়ে শান্তির বার্তা বয়ে আনতে পারো। আমার মাও চোখে এক নদী পানি নিয়ে যখন আমার দিকে তাকিয়ে থাকত তখন বিস্ময় প্রকাশ করতাম আর বলতাম তোমার
চোখে আল্লাহর রহমতের বারি এমন করে ঝরাও কেন মা? আজ বুঝি সেই বৃষ্টির করুণ নবীকরণ। আজ অঝোরে ঝরে যায় সেই স্নেহ বিগলিত করুণার ধারা। যা সন্তানের জন্য রহমত স্বরূপ। মায়ের হৃদয়ের বরফগলা জলে সন্তানের জীবনের প্রতিটি স্টেপ পূর্ণ হতে পারে। জীবনের সারবত্তা যেন মায়ের হাতের দু’আঙুলের
দোয়ার মাঝে লুকিয়ে থাকে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সেই
মায়ের দোয়া কবুল করেন। এ দোয়ার মাঝে কোনও পর্দা থাকে না।
সরাসরি পৌঁছে যায়।
মনে পড়ে প্রথম দিনে তোমার আসার মুহূর্তে বিতাড়িত শয়তানের বিতাড়নের জন্য দোয়াটি চেয়েছিলাম আল্লাহর কাছে। ইলমে রেহেমে তিল তিল করে বেড়ে উঠেছ মায়ের দোয়া ও স্রস্টার দয়ায়। হ‍্যাঁ, প্রতিদিন শুনেছ কুরআন তিলাওয়াত। আর বিশেষ করে তোমার জন্য ছিল অনন‍্য উপহার সূরা ইয়াসিন। আলমে আজসামে যেদিন ভূমিষ্ঠ হলে সেদিন তোমার মা সব ব‍্যাথা যন্ত্রণা মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে প্রভুর দেয়া উপহারখানি দেখার অপেক্ষায় উদগ্রীব হয়েছিল। সেদিন পৃথিবীর বুকে নেমেছিল পেলবতা ভরা প্রশান্তির দরিয়া। শুরু হল তোমার আলমে আজশামে তিল তিল করে বেড়ে ওঠা। প্রতিটি মুহূর্তে পবিত্রতার
সাথে বড়ো করা। দোলনায় তোমার কানে পশেছে কুরআনের
পরশ পাথর। আগামী দিনের সূর্যের আলো। যে আলোর রশ্মি
তোমার হৃদয়কে করেছে আলোকিত।
পথ চলা, যে পথে আগামী দিনের সফলতার সূচনা। ধূসর পৃথিবীর হাতছানি দেয় তোমাকে। তোমার মুখ নিঃসৃত প্রথম শব্দ ছিল আল্লাহ। তোমার অন্তরের মণিকোঠার প্রথম বাক‍্য ছিল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ। শুরু হল সৃষ্টি জগত ঘিরে আঁকিবুকির নানা রহস্যজনক প্রশ্ন। আকাশ, পৃথিবী, চন্দ্র, সূর্য, রাত,দিন, ফুল, বৃষ্টিদের নিয়ে অজস্র প্রশ্নোত্তরের লীলা খেলা। চেষ্টা করেছি সঠিক উত্তর দিতে। প্রভুর সৃষ্টির রহস্য উন্মোচন করতে।

আলহামদুলিল্লাহ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। শিশুর অন্তরের
সাদা পাতায় মা লিখতে থাকে স্রস্টার কুদরতি মহিমা। শিশু শুনতে
থাকে জান্নাত জাহান্নামের বর্ণনা। রাসূলের মিরাজ সফর। সাহাবা
কাহিনী। কুরআনের ছান্দিক মহিমা। কুরআনের কাহিনী ইত‍্যাদি।

শুরু হয় কুরআনের হিফয,যা হল রাসূলের শ্রেষ্ঠ মুযিযা। তুমি ও
তোমার বোন হিফয করে ফেললে শ্রেষ্ঠ বিষয়ের ৬৬৬৬ আয়াত।
একদিন হয়ে গেলে বায়তুল্লাহর মুসাফির। প্রাণভরে চুমা দিলে হাজারে আসাওয়াদ। কী মজাই না লুটলে কৈশোরের তাজা রক্তের সুকোমল হৃদয়ের জিজ্ঞাসাপূর্ণ সময়ের নানা বাহানাকে নিয়ে। আলহামদুলিল্লাহ ।
বায়তুল্লাহর আকর্ষণ কিশোরী হৃদয়কে যথেষ্ট নাড়া দিয়েছিল। বিদায়কালে তোমাদের মুখে ফুটে উঠেছিল রাসূলের সেই বাণী- “…. বায়তুল্লাহ তোকে ছেড়ে যেতে মন চায় না..।”
দেখেছিলাম চোখে চোখে আকাশভরা পানি। বলেছিলাম আজ চলো, ইনশাআল্লাহ আবার আসব।
অনেক বড় হয়েছো। তোমার স্থান পরিবর্তন হল। যাওয়ার বেলা বললাম, যাও ভালো থেকো, কুরআন পড়ো। সিরাতল মুস্তাকিমের পথে চলো। জীবন সুখ-সমৃদ্ধির আলোয় আলোকিত হবে। আর ওপারের ফসল ফলানোর জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়ে চলো। দেখবে দুনিয়া ও আখেরাতের পথ কতই না সুগম হবে।
দুষ্টু মিষ্টি প্রজাপতির রঙিন ডানার অনেক প্রশ্ন যখন তোমার মনের
কোনে উঁকি দিত, অথবা ঘাস ফড়িং? তখন এসব প্রশ্নের উত্তর
দিতে রীতিমতো নাযেহাল হতাম। আজ তাদের ডিসেকশনে ব‍্যস্ত তুমি।‌ ব‍্যস্ত আছো মুম্বাইয়ের ছয়তলা ফ্ল্যাটের কোনো একটি রুমে
জুয়োলজির এম,এস,সির পার্ট, কুরআনের আলো অথবা ঘরকন্নার নিরিবিলি পাঠে। আর আমার মা আলমে বরযখের ইল্লিনের শান্তির নিবাসে আরাম করছে ইনশাআল্লাহ।
আমি আমার দু’কুলের পানি একত্রিত করে মোহনায় এসে প্রতীক্ষার দাঁড় বেয়ে সাগর সঙ্গমে অপেক্ষায় আছি।
অনেক ফুল পাখিরা মিলবে মেলাবে আমার মনের জানালায়
আঁকা ছবির শুটিং। স্মৃতির আকাশ আলো-ছায়া, মেঘ-রোদ্দুর অথবা এক পশলা রহমতের বৃষ্টি ঝরিয়ে আবার আসব বলে
আপাতত ঝাঁ করে চলে গেল। বলে গেল মধ্যরাতে চুপিসারে মিটিমিটি তাঁরাদের মাঝ থেকে তোমার সাথে কথা বলব। যখন
পড়বে-“ইন্না ফি খলকিস সামাঅতি অল আরদি…….।”
ঘুমন্ত পৃথিবীর মায়াবী রূপে মুগ্ধ নেত্ররা শুধু অকারণে মমতার
বৃষ্টি ঝরিয়ে শান্তির হিমেল বায়ু বয়ে আনে। বিবর্ণ হৃদয়ে বিশ্বাসের রঙ মাখি। দুরূদের স্নিগ্ধতার নীল ছোঁয়ায় সূর্য ওঠে লেবু রঙের রঙ ছড়িয়ে। বৃষ্টি ভেজা মাটির সুমিষ্ট গন্ধে মনটা আমার হাসে মানুষের স্রোতে।